সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানুষ নানা সমস্যা সমাধানের মাধ্যমেই আজকের পৃথিবীকে একটি বাসযোগ্য গ্রহে রূপান্তরিত করেছে। আর এই বাসযোগ্য করার পেছনে রয়েছে প্রযুক্তির অপরিসীম অবদান যেখানে নতুন করে যোগ হয়েছে রোবোটিক্স (Robotics) ও এআই। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভবিষ্যতের পৃথিবী হবে আরও প্রযুক্তি নির্ভর।
এখনই পঞ্চাশ শতাংশ কাজ চলে গেছে আইটি ডিগ্রিধারীদের দখলে। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ২০১৩ সালে একদল বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর ৭০ শতাংশ কাজ চলে যাবে প্রযুক্তির দখলে যেখানে রোবোটিক্স ও এআই এর ভূমিকে হবে অনেকটাই লক্ষণীয়। ততদিন অবশ্য অপেক্ষা করতে হয়নি আমাদের। এই ২০১৯ সালেই দেখতে পাচ্ছি প্রযুক্তির প্রনিধানযোগ্য প্রভাব। তাই আমাদেরকে প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
যে কোনো শিক্ষার্থীকে আরও “চিন্তাশীল, উদ্ভাবক, সমাধানকারী ও যোগাযোগে” দক্ষ করে গড়ে তোলে কেবলমাত্র প্রযুক্তি-দক্ষতা। এই দক্ষতা তাকে বিশ্ব নাগরিক হতে সহায়তা করে।
কর্মসংস্থানের ওপর এআই এবং রোবটিক্স (Robotics) এর প্রভাব অত্যন্ত গভীরভাবে পড়তে শুরু করেছে। কর্মক্ষেত্রে রোবট তৈরি করতে যাচ্ছে এক অসীম সম্ভাবনা। বর্তমানে তথ্য সংগ্রহ, ম্যানিপুলেট, জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা থেকে শুরু করে বহুমাত্রিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে রোবট এবং এআই। যার ফলে নির্মাণ খাত, পরিবহন খাত, উৎপাদন খাত, ব্যবসা বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি প্রায় প্রতিটি শিল্পে ঢুকে পড়েছে নতুন এই প্রযুক্তি। ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকারবার্গসহ সিলিকন ভ্যালির অনেক প্রযুক্তি বণিকই বলছেন যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমতা ও রোবট শুধু বিদ্যমান কাজই করছে না বরং নতুন কাজের ক্ষেত্রও তৈরি করছে।
প্রযুক্তি গবেষক গার্টনার এক প্রতিবেদনে বলেছেন, ২০২০ সালের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা এআই আনুমানিক ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন চাকরি তৈরি করবে। সুতরাং আগামীর এই প্রযুক্তিকে মোকাবেলা করার জন্য এখনই নিজেকে প্রস্তুত করা প্রয়োজন।
নতুন চাকরি সৃষ্টিতে রোবটিক্স ও এআইয়ের ভূমিকা:
এ আই এবং রোবোটিক্স (Robotics) নতুনত্বের মাধ্যমে মানুষকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। এ ছাড়াও এআই প্রযুক্তি বিস্তারের আরেকটি সুবিধা হচ্ছে: এআই এবং রোবোটিক্স ডিভাইসের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদের কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থানের।
ফলে, উন্নয়নচক্রের প্রতিটি পর্যায়ে রোবোটিক্স (Robotics) এবং এআই বুঝতে ও পরিচালনা করতে পেশাদার লোকবলের একটি চাহিদা থাকবে। বর্তমান চাকরির বাজারের প্রেক্ষিতে বলা যায়, এআই ও রোবটিক্সের কারণে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি পাবে। ক্যাপগিমিনি পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগকারী এক হাজার প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ শতাংশ বলেছেন যে তারা নতুন চাকরিতে সাধারণ মানুষের বদলে এআই এবং রোবোটিক্স পেশাদারদের নিয়োগ দিচ্ছে। আর যারা একই প্রতিষ্ঠানে অন্য সেক্টরে যোগদান করবেন তাদের ক্ষেত্রেও এআই এবং রোবোটিক্সের উপর দক্ষতাকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।
উদ্ভাবনী কাজে এআই ও রোবটিক্সের ভূমিকা:
বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে AI and Robotics এর প্রভাব সম্পর্কে মাইকেল পেইজ একটি গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণায় দেখা যায়, জরিপকারীরা বেশির ভাগ উদ্ভাবনী এবং উত্তেজনাপূর্ণ কর্মক্ষেত্র তৈরির জন্য এআইয়ের দিকে মনোযোগী হচ্ছে। আগ্রহজনকভাবে, এই পেশাদাররা কেবল আইটি শিল্পের জন্য সীমাবদ্ধ নয়, বরং তারা উৎপাদন, মার্কেটিং, অর্থ, বিক্রয়, এবং অ্যাকাউন্টিং ক্ষেত্রেও তা কাজ করে। এই উদ্ভাবনের কারণে ইতিমধ্যেই লক্ষণীয় হয়েছে যে, এআই এবং রোবোটিক্সের অগ্রগতির ফলে ড্রাইভারহীন গাড়ি এবং স্বয়ংক্রিয় স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে।
সুতরাং সংক্ষেপে শুধু এটুকু বলা যায় যে, বেশির ভাগ শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে রোবোটিক্স (Robotics) এবং এআইয়ের উপর। রোবট এবং এআই কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনায় ইতিমধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে। সুতরাং এখনই সময় রোবটিক্স ও এআই এর সুযোগ ও সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করার। প্রযুক্তিকে ভয় না পেয়ে প্রযুক্তির উপযোগী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলুন।